গলদা চিংড়ি চাষের এলাকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে গুণগত মানসম্পন্ন জুভেনাইলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক নিয়মে নার্সারি পরিচালনা অতীব প্রয়োজন। আধুনিক চিংড়ি চাষে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনের ক্ষেত্রে নার্সারি পুকুরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ, সবল ও বড় আকারের পোনা এবং পোনার মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং মজুদ পুকুরের উৎপাদন নিশ্চিত করতে নার্সারি পুকুরের প্রয়োজনীয়তা নিচে বর্ণনা করা হলো-
১. সুস্থ ও সবল পোনা উৎপাদন করা যায় এবং পোনার মৃত্যুহার কমানো যায়,
২. অল্প জায়গায় অধিক হারে পোনা মজুদ করে বড় পোনা উৎপাদন করা যায়,
৩. রাক্ষুসে মাছ ও অবাঞ্ছিত প্রাণির হাত থেকে চিংড়ির পোনাকে রক্ষা করা যায়,
৪. নার্সারি পুকুর আয়তনে ছোট হওয়ায় এর ব্যবস্থাপনা খরচ তুলনামূলকভাবে কম হয়,
৫. নার্সারি পুকুরে পোনা প্রতিপালনের ফলে চিংড়ি চাষির আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে,
৬. উন্নত ব্যবস্থাপনার কারণে রোগবালাই-এর সম্ভাবনা কম থাকে,
৭. নার্সারি পুকুরে লালনকৃত পোনা খামারে মজুদ করলে চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, এবং
৮. নার্সারি পুকুরে প্রতিপালিত পোনা খামারে মজুদ করে বছরে ২-৩ টি ফসল উৎপাদন করা যায়।
হ্যাচারিতে উৎপাদিত চিংড়ি পিএল নার্সারিতে প্রতিপালনের মাধ্যমে জুভেনাইল উৎপন্ন করা হয়। চিংড়ি চাষে নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম। নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ হলো-
১. পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে,
২. পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে,
৩. প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রাচুর্যতা নিশ্চিত করতে হবে,
৪. সঠিক মাত্রায় সম্পূরক খাদ্য প্রয়ণ করতে হবে,
৫. অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, এবং
৬. রাক্ষুসে মাছ ও অন্যান্য অবাঞ্ছিত প্রাণী নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
গলদা নার্সারি পুকুরে রেণু বা পিএল ছাড়ার পর দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধির মাধ্যমে এরা সুস্থ ও সবল জুভেনাইল-এ পরিণত হয়। অল্প গভীরতা সম্পন্ন জলাশয় রেণু বা পিএল প্রতিপালনের জন্য নার্সারি পুকুর হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পিএল বড় হওয়ার সাথে সাথে এদের বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। গলদার নার্সারি কার্যক্রমে এক স্তর পদ্ধতিতে এর ব্যবস্থাপনা করা হয়।
কার্প জাতীয় রেণু পোনার নার্সারি পুকুর প্রস্তুতির মতই গলদা নার্সারি প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। পিএল মজুদের উপযোগী নার্সারি পুকুর প্রস্তুতি কাজের ধাপগুলো নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো।
ক) আগাছা পরিষ্কার ও পাড় সংস্কার এবং পাড়ের উপর ডালপালা পরিষ্কার,
খ) রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ দূরীকরণ,
গ) চুন প্রয়োগ: ১ কেজি পাথুরে চুন/শতাংশ হারে প্রয়োগ করতে হবে;
ঘ) সার প্রয়োগ: প্রতি শতাংশে জৈব সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম ও টিএসপি ৭৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।
গলদা চিংড়ির পিএল-এর দৈহিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ভিন্নতর। চিংড়ির পিএল খোলস বদলানোর মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়। খোলস বদলের সময় চিংড়ি অত্যন্ত দুর্বল থাকে। এ সময় সবল চিংড়ি অর্থাৎ যেগুলো খোলস বদলায় না সেগুলো দুর্বল গুলোকে খেয়ে ফেলতে পারে। এজন্য চিংড়ি নার্সারি ব্যবস্থাপনায় আশ্রয়স্থল স্থাপনের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, যাতে অন্য কোন প্রাণী বা চিংড়ি দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আশংকা না থাকে। পুকুরের তলার কিছু জলজ উদ্ভিদ থাকলে (হাইড্রিলা, নাজাস) তা চিংড়ির আশ্রয়স্থল হিসেবে ভাল কাজ করে।
ভাল বা নারিকেলের পাতা এমনভাবে পুকুরের মাটিতে পুঁতে দিতে হবে যাতে পাতার অংশ মাটি থেকে একটু উপরে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাল বা নারিকেলের পাতা কোনাকোনি (৪৫) কোনে পুঁতে দিলে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেশি জায়গা পাওয়া যাবে এবং পাতাগুলো মাটির উপর থাকলে সহজে পচবে না। বাঁশের কঞ্চি আঁটি বেঁধে অথবা প্লাস্টিকের পাইপ পৃথক পৃথকভাবে পুকুরের তলায় মাটির উপর রেখে দিলে ভাল হয়। খেজুরের পাতা ও আঁটি করে বেঁধে দেয়া যায়।
পিএল মজুদের ১-২ দিন আগে তাল, নারিকেল বা খেজুর পাতা প্রতি শতাংশে ১-২ টি হিসেবে স্থাপন করতে হবে। অন্যান্য উপকরণগুলো আনুপাতিক হারে ব্যবহার করতে হবে।
গলদা চিংড়ির পোস্ট লার্ভি বা পিএল দেখতে অবিকল বড় চিংড়ির মত তবে আকারে অনেক ছোট। পিএল- এর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-
১. পিএল-এর চেহারা ও আচরণ লার্ভা থেকে পৃথক
২. পিএল দেখতে পূর্ণাঙ্গ চিংড়ির মতো দেখায় যারা সম্মুখ দিকে চলাচল করে
৩. পিএল ট্যাংকের দেয়াল বা মেঝেতে আঁকড়ে থাকে।
চিত্র: ৩.১৪ গলদা চিংড়ির পিএল
১. সুস্থ সবল পিএল এর এন্টিনিউল সোজা সম্মুখদিকে বিস্তৃত থাকে এবং পুচ্ছ পাখনা (uropode) সুন্দরভাবে থাকে,
২. সুস্থ সবল পিএল-এর পরিপাকনালী সর্বদা খাদ্যে পরিপূর্ণ থাকে এবং উদরাঞ্চলের পেশীসমূহ সুগঠিত থাকে,
৩. সুস্থ সবল এবং উন্নতমানের পিএল-এর শরীর স্বচ্ছ, মসৃণ ও পরিষ্কার থাকে
৪. সুস্থ সবল পিএল এর শরীর ক্ষতবিক্ষত থাকে না এবং উপাঙ্গসমূহ অসম্পূর্ণ বা কাটাছেঁড়া থাকে না এবং
৫. দেখতে পূর্ণাঙ্গ চিংড়ির মত, তারা চলার দিক পাল্টিয়ে সম্মুখের দিকে চলতে শুরু করে ট্যাংকের দেয়াল আঁকড়ে থাকে।
১. রং নীলাভ বা কালচে ধরনের,
২. খাবারের প্রতি অনীহা পরিলক্ষিত হয় অর্থাৎ খাবার গ্রহণ করতে চায় না,
৩. ট্যাংকের তলায় পড়ে থাকতে দেখা যায়, এবং
৪. নিম্নমুখী আঁকা বাঁকা পথে এলোমেলোভাবে সাঁতরায়।
পিএল গণনা: পিএল ট্যাংক থেকে স্কুপনেট অথবা ছাঁকুনির সাহায্যে পিএল গণনার সাদা চামুচে নিয়ে চামুচে পিএল এর সংখ্যা গণনা করা হয়। এভাবে কয়েকটি নমুনায়ন করে এক চামুচে পিএল-এর গড় সংখ্যা নির্ধারণ করে এবং এ সংখ্যার উপরে ভিত্তি করে প্রতিটি পলিথিন প্যাকেটে পিএল নিতে হবে এবং পরিবহন করতে হবে। পিএল-এর আকারের ওপর প্রতিটি পলিথিন ব্যাগে পিএল নেওয়ার সংখ্যা নির্ভর করে।
অক্সিজেনযুক্ত পলিথিন ব্যাগে পিএল প্যাকিং ও পরিবহন করা হয়। পলিথিন ব্যাগে পিএল প্যাকিং করার পদ্ধতি নিম্নরূপ-
তবে জাইরোফোমের বাক্সে পলিথিন ব্যাগ পরিবহন করা হলে পিএল-এর পানির তাপমাত্রা বাহ্যিক তাপমাত্রার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে। পরিবহনকালীন সময়ের উপর নির্ভর করে প্রতি ব্যাগে ১,০০০-৩,০০০টি পিএল পরিবহন করা যেতে পারে। পরিবহনকালীন সময়ের উপর নির্ভর করে প্রতি লিটার পানিতে কি পরিমাণ পিএল পরিবহন করা যায় তা নিচে ছক আকারে উল্লেখ করা হলো-
ক্রম | পরিবহনকালীন সময় (ঘন্টা) | পিএল-এর সংখ্যা/লিটার |
---|---|---|
১ | ১ ঘন্টা | ৫০০-৬০০ |
২ | ৪ ঘন্টা | ৪০০-৫০০ |
৩ | ৮ ঘন্টা | ৩০০-৪০০ |
৪ | ১২ ঘন্টা | ২৫০-৩০০ |
৫ | ১২ ঘণ্টার বেশি | ২৫০-২০০ |
গলদা চিংড়ি চাষের এলাকা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে গুণগত মানসম্পন্ন জুভেনাইলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার জন্য নার্সারি পরিচালনায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
নার্সারি পুকুর ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে পুকুরে পিএল মজুদ ঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়। পুকুরে শুধু সার ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব কিছু কম এবং সার ও খাদ্য দুই-ই ব্যবহারে মজুদ ঘনত্ব কিছু বেশি হতে পারে। আবার পুকুরে পানি বদল ও বায়ু সঞ্চালন ব্যবস্থা থাকলে মজুদ ঘনত্ব আরও বেশি হবে। উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনায় শুধু প্রাকৃতিক খাদ্য, মানসম্মত সম্পূরক খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা সময়ের ওপর নির্ভর করে শতাংশ প্রতি মজুদ ঘনত্ব কম বেশি করা যায়। নার্সারি পুকুরে প্রতি শতাংশে পিএল মজুদ ঘনত্ব হলো- এক মাস ব্যাপী মজুদের ক্ষেত্রে ২,০০০-৩,০০০ টি এবং দুই মাস ব্যাপী মজুদের ক্ষেত্রে ১,৫০০-২,০০০ টি।
পরিবেশের তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের তারতম্যের কারণে মজুদের পর পিএল ব্যাপক হারে মারা যেতে পারে। পুকুরে ছাড়ার আগে এদেরকে নতুন পরিবেশের সাথে সহনশীল করে নিলে এ মৃত্যুহার অনেকাংশে রোধ করা যায়। পরিবহন পাত্রে পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রায় সমতা আনয়নই হচ্ছে পরিবেশ সহনশীলকরণ বা খাপ খাওয়ানো। নতুন পরিবেশের সাথে সহনশীল করে নার্সারি পুকুরে পিএল ছাড়ার ধারাবাহিক কাজগুলো নিম্নরূপ-
চিত্র: ৩.২ চিংড়ির পিএল অবমুক্ত করণ।
পাড়ের কাছাকাছি অল্প গভীরতায় মের বা পুকুরের যেখানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে পিএল ছাড়তে হবে। গলদা নার্সারি পুকুরে বিকেলে পিএল মজুদ করা সবচেয়ে ভালো। এ সময় পিএল মজুদ সম্ভ না হলে সকালেও মজুদ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় দিনের যে কোনো সময়ে নার্সারি পুকুরে পিএল ছাড়া যেতে পারে। তবে দুপুরের কড়া রোদ, মেঘনা দিন বা ভ্যাপসা আবহাওয়ায় (বিশেষত নিম্নচাপের দিনে) পুকুরে গলদার পিএল ছাড়া উচিত নয়।
পিএল গলদা নার্সারি পুকুরে মজুদের পর বিভিন্ন কারণে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে মজুদকৃত পিএল মারা যেতে পারে। সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
হ্যাচারিতে উৎপাদিত পিএল-এর পুকুরের পানির লবণাক্ততার সাথে খাপ খাওয়ানোতে হাপা ব্যবহার করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ৬x৪ ঘনফুট সাইজের হাপা পুকুরের পানির বেশি গভীর স্থানে স্থাপন করতে হবে। পিএল এর পুকুরের পানিতে খাপ খাওয়ানো শেষে পানিতে ছাড়ার পূর্বে ১০০টি পোনা হাফায় রাখতে হবে এবং ১২ ঘণ্টা পর পর পিএল-এর সংখ্যা গননা করে দেখতে হবে। যদি দেখা যায় ২৪ ঘণ্টা পর ৭০-৮০ ভাগ পিএল বেঁচে আছে তবে ধরে নিতে হবে বাঁচার হার সন্তোষজনক। বাঁচার হার সন্তোষজনক হলে পুকুরে নিয়মিত সার ও খাদ্য প্রয়োগসহ অন্যান্য পরিচর্যার ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি বাঁচার হার সন্তোষজনক না হয় তা হলে পিএল মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর পুনরায় আংশিক বা নতুন করে মজুদ করতে হবে।
প্রতি শতকে ৮০০-১,০০০টি পিএল মজুদ করা যায়। নিচে ১,০০,০০টি পিএল এর জন্য উল্লিখিত মাত্রায় গুণগত মান সম্পন্ন পিলেট খাবার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
এ ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে তৈরি পিলেট হিসেবে বাজারে প্রাপ্ত স্টার্টার-১ বা নার্সারি-১ প্রথম মাসে এবং স্টার্টার-২ বা নার্সারি-২ দেহের ওজনের ভিত্তিতে খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।
গলদা চিংড়ি সাধারণত আলো আঁধারিতে খেতে বেশি পছন্দ করে। সে কারণে সূর্যোদয়ের পূর্বে এবং সূর্যাস্তের সাথে সাথে খাদ্য প্রয়োগ করা উত্তম। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী দুপুরে ও রাত্রেও আনুপাতিক হারে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে সূর্যাস্তের সময় প্রয়োগকৃত খাবারের পরিমাণ বেশি হতে হবে।
প্রতিদিন ফিডিং ট্রে-তে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। কাঠ, বাঁশ, টিন অথবা সিনথেটিক নেট দ্বারা ফিডিং ট্রে বা খাদ্যদানী তৈরি করা যেতে পারে। পুকুরের আকার অনুযায়ী ফিডিং ট্রে-এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত এক বিঘা আয়তনের একটি পুকুরের জন্য ৭-৮ টি ট্রে ব্যবহার করা উত্তম। ট্রে সাধারণত পাড়ের বকচর অথবা পুকুরের ঢালে স্থাপন করতে হয়।
নার্সারি পুকুরে জোয়ারের সময়ে আংশিক এবং পাম্প মেশিনের সাহায্যে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তনের মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে জোয়ারের সময় অথবা পাম্প মেশিনের সাহায্যে জলাধারে পানি পূর্ণ করে রাখা হয় এবং প্রয়োজনানুসারে পরিমাণমতো পানি নার্সারি পুকুরে সরবরাহ করা হয়। নার্সারি পুকুরের পানির গুণাগুণ ঠিক রাখার জন্য পুকুরের পানি প্রতিদিন প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করা ভাল। নার্সারি পুকুরে পানির গুণাগুণ নিম্নরূপ হওয়া দরকার।
উপাদান | মাত্রা |
---|---|
তাপমাত্রা | ২৫°-৩১° সে |
দ্রবীভূত অক্সিজেন | ৫-৭ পিপিএম |
পিএইচ | ৭.০-৮.৫ |
স্বচ্ছতা | ২৫-৩৫ সে. মি |
লবণাক্ততা | ০-৪ পিপিটি (গলদা) |
পিএল মজুদের পর প্রতিদিন পুকুর বা ঘের পর্যবেক্ষণ করতে হবে। পানির রং হালকা সবুজ রাখার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনে সার ব্যবহার করতে হবে। চিংড়ি খুব সকালে পাড়ের কিনারে চলে আসলে বুঝতে হবে পুকুরে অক্সিজেন ঘাটতি আছে। অক্সিজেন সরবরাহের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের পাতিল দিয়ে ঢেউ নিতে হবে অথবা বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে পানি আন্দোলিত করতে হবে। প্রয়োজনে বাইরে থেকে দূষণমুক্ত নতুন পানি সরবরাহ করতে হবে। শতক প্রতি ১৫০ গ্রাম হারে এমপি সার প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। বিক্রির উপযোগী হলে জুভেনাইল বিক্রি করতে হবে অথবা ঘনত্ব কমিয়ে দিতে হবে।
কমফাঁসের বেড়াজাল, ব্যাগনেট, স্কুপনেট, প্লাস্টিক গামলা ইত্যাদির সাহায্যে নার্সারি পুকুর থেকে শতকরা ৯০ ভাগ চিংড়ি জুভেনাইল ধরা যায়। বাকি চিংড়ি জুভেনাইল পানি শুকিয়ে ধরা হয়। জোয়ার ভাটা এলাকায় সে ক্ষেত্রে জোয়ার আসার দুই তিন ঘন্টা পূর্বে পুকুরের পানি কিছুটা কমিয়ে নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে জোয়ারের সময় পুকুরে পানি ঢুকানোর সময় বড় পোনা পানি সরবরাহ খালের নিকট চলে আসে এবং সেসময়েও হারভেষ্টিং বক্স দ্বারা কিছু জুভেনাইল ধরা যেতে পারে। এই হারডেষ্টিং বক্স থেকে প্লাস্টিক বালতি দিয়ে পোনা সংগ্রহ করা হয় এবং সংগৃহীত পোনা থেকে সুস্থ ও সবল চিংড়ি জুভেনাইল বাছাই করে নিয়ে মজুদ পুকুরে স্থানান্তর করা হয়। আবার অনেক সময় মজুদ পুকুর সংলগ্ন নার্সারি পুকুরের সংযোগ খালের মুখ খুলে দিলে সরাসরি পোনা মজুদ পুকুরে চলে যায়।
আরও দেখুন...